নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজার সদর উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের ব্যপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কারণ দর্শানো (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এই নোটিশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নির্বাহী প্রকৌশলী ৪৬.০৩.২২০০.০৬১.৯৯.০০২.২৪-১০৭১/১(২) স্মারক নাম্বার কারণ দর্শানো (শোকজ) এর চিঠিটি ইস্যু করা হয়। বুধবার (০১ অক্টোবর) জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আলী আজগরের নির্দেশে কক্সবাজার জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আবুল মনজুরকে আহবায়ক ও আইডব্লিওএমের একজন সদস্যকে নিয়ে ২ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ৪ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। ২০২৩ সালে শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ঘনিষ্ট সহচর হওয়ার সুবাধে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিয়মবহির্ভূত ভাবে সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগদান করেন। যোগদান করার পর থেকে তার বিরুদ্ধে হাউজহোল্ড টয়লেট, রেইন ওয়াটার, কমিউনিটি টয়লেট,ডিপ টিউবওয়েল, সেলো টিউবওয়েল, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, পাইপ লাইন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। কাজ বন্ধ থাকার বিষয় নিয়ে প্রতিবেদক কথা বললে তার সাথে আক্রমণাত্মক ভাষায় তিনি বলেন, আপনি চ্যালেঞ্জ দেওয়ার কে? আর আমি চ্যালেঞ্জ নেওয়ার কে? শুধু তাই নয় তিনি কক্সবাজার যোগদান করার পর থেকে ঠিকাদারদের সাথে যোকসাজশ করে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম করে আসছে। ঠিকাদাররা তাকে ম্যানেজ করে শতভাগ কাজ বুঝিয়ে না দিয়ে প্রকল্পের ৬০-৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করে শতভাগ বিল তুলে নেন। বিভিন্ন প্রকল্পে টেন্ডার বাণিজ্য করার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি মোটা অংকের কমিশন না পেলে বন্ধ থাকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কাজ। শোকজের চিঠি ইস্যু হওয়া পর থেকে উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুলের দৌড়ঝাপ শুরু হয়। তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন উপরের মহলের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদন্ত বন্ধ রাখতে চাপ প্রয়োগ করেন পত্রিকার প্রতিবেদকসহ সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীদের। তদন্ত চলাকালীন সময় তিনি তার সহযোগী ঠিকাদারদেরকে অভিযোগকারীদের বাড়িতে পাঠিয়ে সংস্কারের পায়তারা করেন। পরে স্থানীয় মেম্বারের বাধার মুখে পড়ে সংস্কার সম্ভব হয়নি। জানা যায় , সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পিএমখালী ইউনিয়নের ছনখোলা মালিপাড়ার বাসিন্দা উপকারভোগী রমজান আলী হাউজহোল্ড টয়লেটের অনিয়ম নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। একই দিনে আরো ২জন উপকারভোগী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তারা হলেন, পিএমখালী ইউনিয়নের ০৪ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম জুমছড়ির বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন ও একই ইউনিয়নের পশ্চিম জুমছড়ির বাসিন্দা উপকারভোগী সাহাব উদ্দিন। পরবর্তিতে আরো বেশকয়েক জন উপকারভোগী সাইফুলে বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তারা হলেন , খুরুশকুল ইউনিয়নের দক্ষিণ হিন্দু পাড়ার উর্মি দে, একই ওয়ার্ডের সৌরজিৎ ও চম্পা রানী দে সহ প্রমূখ। অভিযোগকারী সাহাব উদ্দিন জানান, কক্সবাজার সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে আমাকে একটি হাউজহোল্ড টয়লেট বরাদ্দ দেন। আনুমানিক ৬-৭ মাস আগে এটির কাজ শুরু হয়। টয়লেটটি সরকারী ভাবে বিনামূল্যে প্রদান করলেও কিন্ত ঠিকাদার শাহ আলম উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ও উপজেলা চেয়ারম্যানের কথা বলে আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমার এই বিষয়ে ধারণা না থাকায় এক পর্যায়ে আমি তাকে ৯ হাজার টাকা ও ২পিস রড়, ৫ ব্যাগ সিমেন্ট দিতে বাধ্য হই। কিন্ত ঠিকাদার কাজটি সন্তোষজনক ভাবে করেননি। কনস্ট্রাকশন কাজে ৩নং ইট, পুরাতন খোয়া, কাদা মাটি মিশ্রিত বালি সাইটে নিয়ে আসেন। ছাদে পর্যাপ্ত রড় দেওয়ার কথা থাকলেও ৪-৫টি রড় ব্যবহার করে। সিমেন্ট কম ব্যবহার করে। আমি এই বিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এটির গুনাগুন ঠিক আছে বলে জানান। ঠিকাদার ও উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার আমাকে এই মালামাল নিয়ে কাজ করতে চাপ প্রয়োগ করে। আমি এতকিছু দেওয়ার পরও ঠিকাদার আমার কাজটি ঠিকভাবে করেননি। বর্তমানে টয়লেটের ভেতরে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে। পর্যাপ্ত পরিমান সিমেন্ট দেওয়ালের বেহাল দশা। আমি এটির সুষ্ঠ বিচার চাই। রমজান আলী জানান, টয়লেটের কনস্ট্রাকশন কাজে ৩নং ইট, পুরাতন খোয়া, কাদা মাটি মিশ্রিত বালি ব্যবহার করেন । এবং ছাদে রড কম ব্যবহার করায় টয়লেটটি যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়ার ঝুুঁকি রয়েছে। বৃষ্টি হলে ছাদের ভেতরে পানি ডুকে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায়। চম্পা রানী বলেন, টয়লেটের কনস্ট্রাকশন কাজে ৩নং ইট, পুরাতন খোয়া, কাদা মাটি মিশ্রিত বালি ব্যবহার করেন। ছাদে একদমই রড ব্যবহার করেননি। বামপাশে কোন ধরনের প্লাস্টার না করে ঠিকাদার উপকারভোগীর কাছে হস্থান্তর করেছে। টয়লেটটি যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। এই বিষয়ে পিএমখালী ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার আঞ্জুমারা জানান, আমি আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সুবিধার্থে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপÍর বরাবর হাউজহোল্ড টয়লেটের জন্য তালিকা প্রদান করি। কিন্ত তালিকাতে সব টয়লেট দেননি যা দিছে সবগুলোতে ঠিকাদারের অনিয়ম ও উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলীর বেখেয়ালিপনায় সব কাজে অনিয়ম দুর্নীতি করেছে। এই বিষয়ে কক্সবাজার জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে আগামী ৪ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত নিরপক্ষ হবে এখানে কোন পক্ষপাতের সুযোগ নেই। সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেনি।