জামশেদ ইসলাম
চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার শমসেরপাড়া এলাকায় দু’গ্রুপের গোলাগুলিতে আফতাব উদ্দিন তাহসীন (২৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। সোমবার (২১ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এর কিছুক্ষণ পর চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশ থেকে ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত তাহসীন চান্দগাঁও থানার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীরপুল এলাকার দিলা মিস্ত্রি বাড়ির মো. মুসার ছেলে।ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে তাহসীন চা পান করছিলেন। ওই সময় চার যুবক একটি মাইক্রোবাস থেকে নেমে তাহসীনকে লক্ষ্য করে চার রাউন্ড গুলি করে। তাহসীন প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও তারা কর্ণপাত করেননি। এরপরই ওই যুবকরা মাইক্রোবাসে উঠে চলে যায়।যুবক নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘গোলাগুলির খবর পেয়েছি। আমরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি এখন।এদিকে নগর পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শমসেরপাড়া এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সারোয়ার ও সাজ্জাদ গ্রুপের মধ্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। নিহত তাহসীন নামে ওই যুবক সারোয়ার গ্রুপের সমর্থক।’ তাহসীন ছাত্রলীগ করলেও উঠাবসা ছিল ‘শিবিরকর্মী’ সারোয়ারের সঙ্গে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত তাহসীন নগরের ওমরগণি এম ই এস কলেজের ছাত্র ছিলেন। ওই কলেজের রাজনীতিতে তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য আরশাদুল আলম বাচ্চুর অনুসারী হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। তবে, ‘শিবিরকর্মী’ সারোয়ার স্থানীয় প্রভাব বজায় রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ছাত্রলীগকর্মীদের সাথেও সখ্যতা গড়ে তোলেন। সেই সুবাদে তাহসীন সারোয়ারের সাথেই চলাফেরা করতেন।তবে স্থানীয়রা সারোয়ারকে 'শিবিরকর্মী' হিসেবে চিনলেও নগর শিবিরের একটি সূত্র বলছে, 'সারোয়ার কস্মিনকালেও ছাত্রশিবির করেননি।' পুলিশ বলছে, তাহসীন ওই এলাকায় ইট, বালু ও সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। তার এই ব্যবসায় সহযোগী ছিলেন সারোয়ার। কে এই সাজ্জাদ-সারোয়ার চট্টগ্রামের এক সময়ের মূর্তিমান আতঙ্ক, পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও শিবিরক্যাডার হিসেবে পরিচিত, আলোচিত এইট মার্ডার মামলার মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি সাজ্জাদ আলী খান। বর্তমানে বিদেশে পলাতক এই সাজ্জাদের সহযোগী হিসেবে অপরাধজগতে পদার্পণ করেন বায়েজিদ বোস্তামী থানা-সংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। সবশেষ ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। অবশ্য পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।আর সারোয়ার ওরফে বাবলা ভারতে পলাতক সাজ্জাদ আলী খানের হয়েই একসময় কাজ করতেন। তিনি নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার খোন্দকারপাড়ার কালা মুন্সির বাড়ির আব্দুল কাদেরের ছেলে। সারোয়ারের বিরুদ্ধে নগরের ডবলমুরিং, পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ বোস্তামি থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট ১৮টি মামলা রয়েছে। সবগুলোতে জামিনে রয়েছেন তিনি। সাজ্জাদের সাম্প্রতিক অপকর্ম সোমবারের ঘটনার আগে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে সাজ্জাদ হোসেনসহ আরও দুজন গুলি করতে করতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর ওই ভবন মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন–কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। এই চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়।এছাড়া ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় গুলি করেন সাজ্জাদ তাঁর সহযোগীদের নিয়ে। আর গত বছরের ২৭ অক্টোবর চাঁদা না পেয়ে দলবল নিয়ে মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকার বাসায় গিয়েও গুলি করে ওরা।৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রকাশ্যে বারবার এমন অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ যেন ‘ছুঁতে’ পারছে না সাজ্জাদ-সারোয়ারকে। আর এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন বায়েজিদ-চান্দগাঁওয়ের স্থানীয়রা। এলাকায় সাজ্জাদের চাঁদা দাবির বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে। মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক চাঁদা নেয় এই সন্ত্রাসী।