মাহফিলের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা: শিল্পী ও সঞ্চালকের প্রতি সম্মান কোথায়?
মাহফিল আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু ধর্মীয় জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র নয়, বরং আত্মিক উন্নয়নেরও এক মহৎ ক্ষেত্র। তবে, মাহফিল আয়োজনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় কিছু অসঙ্গতি আজকাল বিশেষভাবে চোখে পড়ছে। বিশেষত, শিল্পী ও সঞ্চালকের প্রতি অবহেলা এবং অসম্মানজনক আচরণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একজন সুপরিচিত ইসলামী সংগীতশিল্পী সম্প্রতি তার ফেসবুক পোস্টে এই আক্ষেপ ব্যক্ত করেছেন। তার মতো অনেক শিল্পী ও সঞ্চালক নিয়মিত এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন। এমনকি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমিও একাধিকবার এই সমস্যার শিকার হয়েছি।
মাহফিলের মতো পবিত্র আয়োজনে এ ধরনের আচরণ শুধু দুঃখজনক নয়, এটি আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথেও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এই প্রবন্ধে আমরা এ সমস্যার গভীরে যাব এবং সমাধানের দিকনির্দেশনা তুলে ধরব।
মাহফিল আয়োজনের পিছনের বাস্তবতা হলো-একটি মাহফিল যেন একটি বড় বৃক্ষ। এর শিকড় হলো আয়োজক কমিটি, তাজা পাতা হলো বক্তারা, আর ফুল ও ফল হলো শিল্পী ও সঞ্চালক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ফুল-ফলকে আমরা অবহেলা করি। আয়োজকেরা প্যান্ডেল, আলোকসজ্জা, এবং বক্তাদের জন্য বিশাল বাজেট বরাদ্দ রাখেন, অথচ শিল্পী ও সঞ্চালকের জন্য সঠিক পরিকল্পনার অভাব প্রকট।
মাহফিলে ইসলামী সংগীত শিল্পী ও সঞ্চালকের প্রতি সাধারণত যে সমস্যাগুলো দেখা যায়-
১. সম্মানের অভাব:
শিল্পী ও সঞ্চালককে সম্মানের সঙ্গে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাদের সঙ্গে পরে তেমন আচরণ করা হয় না। অনুষ্ঠানের আগে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। কখনো খাবারের আয়োজন থাকে অপ্রতুল, আবার কখনো বিশ্রামের সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয় না।
২. অপ্রতুল সম্মানী:
অনুষ্ঠানে দীর্ঘসময় কাজ করার পর সামান্য সম্মানী দিয়ে বিদায় জানানো হয়। অনেক সময় যাতায়াত খরচ দেওয়ার বিষয়েও কার্পণ্য করা হয়।
৩. পরিচিতিতে অবজ্ঞা:
মাহফিলের পোস্টার ও প্রচারণায় বক্তাদের নাম জ্বলজ্বল করে থাকে, অথচ শিল্পী ও সঞ্চালকের নাম প্রায় অনুপস্থিত।
৪. সমন্বয়ের অভাব:
অনেক সময় অনুষ্ঠান পরিচালনার সময়সূচি ঠিক না করায় সঞ্চালককে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এতে পুরো আয়োজনের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়।
৫. মৌলিক যত্নের ঘাটতি:
শিল্পী ও সঞ্চালকের জন্য খাবার, বিশ্রাম, এবং নিরাপদ যাত্রার কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকে না।
উক্ত সমস্যার উত্তরণের জন্য মাহফিল পরিচালনা কমিটির সদস্যদের করণীয় হলো- ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় প্রতিটি মানুষের পরিশ্রমকে সম্মান করতে। শিল্পী ও সঞ্চালকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ শুধু মানবিক দায়িত্ব নয়; এটি ইসলামের অন্যতম শিক্ষা।
সুতরাং সমাধানের পথ হিসেবে নিম্নোক্ত রাস্তায় হাটা যায়-
১. সম্মানের পরিবেশ নিশ্চিত করা:
শিল্পী ও সঞ্চালকের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে হবে। অনুষ্ঠান শুরুর আগে ও পরে তাদের দেখভাল করা প্রয়োজন।
২. যথোপযুক্ত সম্মানী প্রদান:
তাদের সময় ও শ্রমের মূল্যায়ন হিসেবে সম্মানী নির্ধারণ করতে হবে। এটি তাদের পেশাদারিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন।
৩. পরিচিতির গুরুত্ব দেওয়া:
মাহফিলের প্রচারণায় শিল্পী ও সঞ্চালকের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত। তাদের অবদান তুলে ধরলে আয়োজকদের পেশাদারিত্ব আরও সমৃদ্ধ হবে।
৪. পরিকল্পিত সময়সূচি:
অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ এবং তা যথাযথভাবে অনুসরণ করা আবশ্যক। এতে সঞ্চালনার দায়িত্ব সহজ হবে।
৫. মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করা:
শিল্পী ও সঞ্চালকের যাতায়াত, খাবার এবং বিশ্রামের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
মাহফিল একটি পবিত্র আয়োজন। এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা আয়োজকদের নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। বক্তা, শিল্পী, এবং সঞ্চালক সবাই এই আয়োজনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের যথাযথ সম্মান দেওয়া, সময় মেনে চলা, এবং মৌলিক যত্ন নেওয়া ইসলামের অন্যতম বার্তা। আয়োজকদের উচিত, মাহফিলের পবিত্রতাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে পেশাদারিত্ব ও মানবিক মূল্যবোধের সমন্বয়ে এগিয়ে আসা।
প্রতিবেদক-
এ.জে. নেজামউদ্দিন