ইমাম হোসেন
মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে এক শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর দেশটিতে ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (২৮ মার্চ) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে ৭.৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি দেশটির মান্দালয় শহরের কাছে আঘাত হানে। এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৪ জনে পৌঁছেছে এবং আহত হয়েছে ৭৩২ জনের বেশি।
প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল সাগাইং শহরের কাছাকাছি, যা রাজধানী নেপিদো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নেপিদো, যেখানে নিহতের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৯৬ জন। সাগাইংয়ে ১৮ জন এবং মান্দালয়ে ৩০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহতদের মধ্যে নেপিদোতে ১৩২ জন এবং সাগাইংয়ে ৩০০ জনের বেশি রয়েছেন।
ভূমিকম্পের ফলে ঐতিহাসিক স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাগাইং অঞ্চলের একটি সেতু ধসে পড়েছে, যার ফলে এলাকাটির সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি মসজিদ, প্যাগোডা ও স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান
মিয়ানমার সরকার ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে। তবে দুর্গম এলাকা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় উদ্ধার কাজে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যেই দেশটির জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মানবিক সহায়তা চেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে এটি মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকটি আফটারশক অনুভূত হয়েছে, যার মধ্যে একটি ছিল ৬.৪ মাত্রার। এর ফলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে রয়েছেন।
প্রতিবেশী দেশেও ভূমিকম্প অনুভূত
শক্তিশালী এই ভূমিকম্পের কম্পন শুধু মিয়ানমারে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং প্রতিবেশী বাংলাদেশ, ভারত, চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামেও অনুভূত হয়েছে। তবে এসব দেশে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
উদ্ধার অভিযান অব্যাহত
দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখনও আহতদের উদ্ধার করা চলছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে এবং চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ভূমিকম্পের কারণে ভবিষ্যতে আরও আফটারশক হতে পারে, যা নতুন করে বিপদ তৈরি করতে পারে।
সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে বিভিন্ন ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।