1. live@www.dainikonlinetalaashporbo21.com : news online : news online
  2. info@www.dainikonlinetalaashporbo21.com : দৈনিক অনলাইন তালাশ পর্ব ২১ :
মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ০৭:২৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিক সুরক্ষা ও কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনী ও পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত সীমান্তে সন্ত্রাসের ছায়া কাঁপানো সাবেক সেনা সদস্য আশিক তালুকদার গ্রেফতার রাজশাহী মোহনপুর উপজেলায় পুকুর খনন নামেম মহাউৎসব এর ফলে কৃষকদের ভুগান্তিতে পড়েছে রাজশাহী মোহনপুর উপজেলায় পুকুর খনন নামেম নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবির অভিযানে মাদক সহ রোহিঙ্গা যুবক আটক বান্দরবানে ঝরনায় নিখোঁজ মেহরাবের লাশ চার দিন পর উদ্ধার বান্দরবানে সেনাবাহিনীর অভিযানে অস্ত্র সরঞ্জামসহ ৯ জন আটক বান্দরবানে ঝর্ণা দেখতে গিয়ে কিশোর নিখোঁজ এনসিপি সিলেট জেলার যুগ্ম-সমন্বয়কারী মনোনীত হয়েছেন গোয়াইনঘাটের ফয়সল আহমদ  পার্বত্য জনপদে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে, থানচিতে মতবিনিময় সভায় বান্দরবান জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর

সীমান্তে সন্ত্রাসের ছায়া কাঁপানো সাবেক সেনা সদস্য আশিক তালুকদার গ্রেফতার

আমানউল্লাহ আনোয়ার কক্সবাজার 
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫
  • ৪৫ বার পড়া হয়েছে

আমানউল্লাহ আনোয়ার কক্সবাজার

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার গর্জনিয়া সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে জেঁকে বসা সন্ত্রাসের মূর্ত প্রতীক ছিল ‘ডাকাত শাহিন’ ও তার গ্যাং। তার গ্রেফতারের পরপরই আলোচনায় উঠে আসে আরেক ভয়ংকর নাম—তার ছায়াসেনা, সহযোগী এবং অপরাধ সাম্রাজ্যের অন্যতম চালিকাশক্তি আশিক তালুকদার। এবার সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সফল যৌথ অভিযানে কক্সবাজার শহর থেকে আটক করা হয়েছে এই চাঞ্চল্যকর সাবেক সেনা সদস্যকে।

গত ২৩ জুন ২০২৫, সোমবার দুপুর আনুমানিক ২টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার শহরের একটি গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে যৌথবাহিনী আশিক তালুকদারকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে উখিয়ার মরিচ্যা পাতাবাড়ি এলাকায় আরেকটি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল, একটি দেশি এলজি, একে-৪৭ রাইফেলের গুলি, বিপুল পরিমাণ গাঁজা, সামরিক প্রশিক্ষণের বই, ক্যাম্পে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম ও রেকর্ড।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, আশিক তালুকদার ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং চট্টগ্রামের বাইজিদ ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় হঠাৎ করে তিনি নিখোঁজ হন। এরপর থেকে ধীরে ধীরে অস্ত্র ও মাদকের জগতে পা রাখেন।

 

২০২২ সালে মাদক মামলায় প্রথম গ্রেফতার হন তিনি। ওই বছরের শেষের দিকে বেনাপোল সীমান্তে আবারও অস্ত্রসহ ধরা পড়েন। জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে যান এবং রাজধানী ঢাকা থেকে সরে এসে কক্সবাজারের উখিয়া মরিচ্যায় গা-ঢাকা দেন।

 

সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য উঠে এসেছে তার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড নিয়ে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, আশিক তার সেনাবাহিনীতে প্রাপ্ত সামরিক প্রশিক্ষণ ব্যবহার করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দিতেন। তাদের শেখাতেন অস্ত্রচালনা, এলাকা দখল কৌশল, গ্রুপ মুভমেন্ট ও গুপ্তচরবৃত্তির কলাকৌশল।

 

এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি শাহিন ডাকাতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। একসময় এই ডাকাতের সবচেয়ে বিশ্বস্ত দেহরক্ষী এবং অপরাধ সাম্রাজ্যের কৌশলগত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।

 

আশিকের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে ওঠে গর্জনিয়া সীমান্তে। এই চক্রে ছিল আরও কয়েকজন সাবেক সেনা সদস্য, স্থানীয় দালাল এবং সীমান্ত এলাকার প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি। তারা মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন ‘আরাকান আর্মি’-র সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে ছিল। বাংলাদেশ থেকে অস্ত্র ও রসদ সরবরাহ করা হতো আরাকান আর্মিকে, যার বিনিময়ে দেশে আসত গরু, ইয়াবা ও বিভিন্ন মাদক।

 

আশিকের শরীরে ‘আরাকান আর্মি’র লোগো সংবলিত উল্কি (ট্যাটু) তার এই সংযুক্তির সরাসরি প্রমাণ বহন করে। শুধু তাই নয়, তিনি নারী পাচার চক্রের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। ক্যাম্প থেকে বাছাইকৃত তরুণীদের শাহিনের জন্য সরবরাহ করতেন, গড়ে তুলেছিলেন ভয়ংকর এক ‘সাপ্লাই চেইন’। এই চেইনের মাধ্যমে প্রতি মাসে উপার্জন করতেন লক্ষাধিক টাকা।

 

এই চক্রের পতনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়া এলাকার সাধারণ মানুষ। স্থানীয়দের মতে, আশিক তালুকদারের গ্রেফতার মানে কেবল একজন সন্ত্রাসীর পতন নয়, বরং এটি সীমান্তভিত্তিক এক সুসংগঠিত অপরাধ সাম্রাজ্যের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলার সমতুল্য।

 

উখিয়া থানায় আশিক তালুকদারকে হস্তান্তরের পর মামলা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তার বিরুদ্ধে আরও গভীর তদন্তে নেমেছে। তাকে ঘিরে যাদের নাম উঠে আসছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনারও প্রস্তুতি চলছে।

 

প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, সাবেক সেনা সদস্যের এমন রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা শুধু বাহিনীর ভাবমূর্তিতেই আঘাত নয়, বরং এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি। অতীতে এমন অনেক সদস্য দুর্বল মনোবল ও অর্থের লোভে বিপথগামী হয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়েছে, যা গোটা রাষ্ট্রের জন্য শঙ্কার বিষয়।

 

নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়া এলাকার সচেতন মহল জানিয়েছে, শুধু আশিক নয়, এমন বহু চক্র এখনও সীমান্তে সক্রিয়। এদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।

 

তাদের দাবি, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা যেন এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখে। সন্ত্রাস, নারী ও মাদক পাচারমুক্ত একটি নিরাপদ সীমান্ত অঞ্চল গঠনে এটি অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয়দের মতে, সেনাবাহিনীর এ অভিযান কেবল বাহিনীর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারই নয়, জাতীয় নিরাপত্তা ও জনসুরক্ষার দিক থেকেও তা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

 

আশিক তালুকদারের গ্রেফতার শুধুমাত্র একটি অপরাধীর পতন নয়, এটি একটি ভয়ঙ্কর আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের দৃঢ় পদক্ষেপ। সেনাবাহিনীর এ অভিযান প্রমাণ করেছে, রাষ্ট্র তার নিরাপত্তা রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং জাতি আশাবাদী—এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকলে সীমান্ত সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা নির্মূল করাও সম্ভব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© www.dainikonlinetalaashporbo21.com