আনিছুর রহমান বাঁশখালী, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামের অপার সম্ভাবনাময় উপজেলা বাঁশখালী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কৃষি জমি, সমুদ্র উপকূল এবং মানুষের কর্মঠ মনোভাব এই এলাকার উন্নয়নের মূল ভিত্তি। কিন্তু এখনো অনেক ক্ষেত্রেই বাঁশখালী তার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে আছে। তবে কিছু সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে সামগ্রিকভাবে বাঁশখালীর চিত্র পাল্টে যেতে পারে এবং এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হতে পারে। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে বাঁশখালীর প্রতিটি ঘরে। মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা এবং আধুনিক শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা অপরিহার্য। একইভাবে, স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি বাঁশখালীবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা।বাঁশখালীর অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো কৃষি ও মৎস্য খাত। এই দুই খাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। উন্নত জাতের বীজ, সার ও কীটনাশক সহজলভ্য করা, আধুনিক সেচ ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি। মৎস্য চাষে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ এবং সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে পারলে উৎপাদন বহুগুণ বাড়বে। কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা বাড়ানো গেলে কৃষিপণ্য ও মাছের অপচয় কমবে এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে।যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতা বাঁশখালীর উন্নয়নে অন্যতম বাধা। সড়ক যোগাযোগ উন্নত করা, গ্রামীণ সড়কগুলোকে মূল সড়কের সাথে সংযুক্ত করা এবং যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। অভ্যন্তরীণ নৌপথের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে পণ্য পরিবহন ও যাত্রী যাতায়াত সহজ করা যেতে পারে।পর্যটন শিল্পের বিকাশ: বাঁশখালীর বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত, ইকোপার্ক এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটন শিল্পের বিকাশে অপার সম্ভাবনা বহন করে। পর্যটন অবকাঠামো নির্মাণ, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার মাধ্যমে এই খাত থেকে বিপুল রাজস্ব আয় সম্ভব। এতে স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থানও তৈরি হবে।বাঁশখালীতে বড় আকারের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশে জোর দিতে হবে। এতে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বেকারত্বের হার কমবে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা গেলে এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা বাঁশখালীর জন্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, বাঁধ সংস্কার এবং আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব।বাঁশখালীর প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা এবং এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপরিকল্পিত নগরায়ন রোধ, বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এই পদক্ষেপগুলো সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বাঁশখালী কেবল চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হিসেবে নয়, বরং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। এতে বাঁশখালীবাসীর জীবনে আসবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি।