নিজস্ব প্রতিবেদক
"আমি চোখ খুললাম। চারপাশ অন্ধকার। পাশে দেয়াল, নিচে মাটি— ঝোপঝাড়ে ঘেরা এলাকা।" — এভাবেই শুরু ছাত্রনেতা [নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্রীয় নেতা]-র ফিরে আসার গল্প। আন্দোলনের হাল ধরার ‘অপরাধে’ তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ১৯ জুলাই রাতেই। এরপর গুম, অমানবিক নির্যাতন, হুমকি আর ব্ল্যাকমেইল— সবই তাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে, একজন ছাত্রনেতা হয়ে।
তার বক্তব্য অনুযায়ী, তাকে একটি ফ্লাইওভারের নিচে ফেলে রেখে যায় একটি অজ্ঞাত বাহিনী। হুঁশ ফিরে আসার পর তিনি নিজেই পৌঁছান ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে। সেখান থেকেই শুরু হয় গণ-অধিকার পরিষদ, ছাত্র ও নাগরিকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার এক নতুন অধ্যায়।
তাকে গুমের পর যখন হাসপাতালে আশ্রয় নিতে হয়, তখন একের পর এক আসে সরকারি এজেন্সির চাপ। প্রথমে আলোচনার প্রস্তাব, পরে প্রেসার— আন্দোলন স্থগিত করলেই নিরাপত্তা, রাজনৈতিক আশ্বাস। কিন্তু তিনি সেই ‘চুক্তি’ মানেননি।
২৩ জুলাই প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি সরকারকে দায়ী করে বলেন,
> "এটা স্পষ্ট সরকারের দমন-পীড়নের জন্যই এই পরিস্থিতি। রক্ত দিয়ে কোটা সংস্কার চাইনি। আমরা বিচার চাই।"
প্রেস ব্রিফিংয়ে ইন্টারনেট না থাকায় সরাসরি প্রচার হয়নি। পরে জানা যায়, ওইদিনই আসিফ, বাকের, রিফাতেরও খোঁজ মেলে। তারা কেউ গুম হয়েছিল, কেউ লুকিয়ে ছিল।
তবে সবকিছুই ছিল অস্থায়ী নিরাপত্তা। সরকার নজরদারি বাড়ায় গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের ওপর। পুলিশের নজরদারি, ইন্টারনেট-ফোনলাইন বিচ্ছিন্নকরণ, এবং চিকিৎসকদের হুমকি— সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি হয়।
২৬ জুলাই, হাসপাতালে শেষ ধস্তাধস্তির পর তিন ছাত্রনেতাকে তুলে নেওয়া হয় সরকারি বাহিনীর একটি মাইক্রোবাসে করে।
গন্তব্য: রাজধানীর কুখ্যাত মিন্টো রোডের ডিবি অফিস।
সরকারপ্রধানদের মুখে শান্তির আহ্বান থাকলেও মাঠে চলছে নিপীড়নের খেলা— এমনই বার্তা পাওয়া যাচ্ছে ছাত্রনেতাদের অভিজ্ঞতা থেকে।