মোহাম্মদ সোলাইমান
(হাটহাজারী চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ফতেপুর গ্রামে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠার প্রায় ৫৮ বছরে আমাদের পূর্বপুরুষরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, আজও সেই সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। সম্প্রতি যে ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
আমার বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই। তাই শিক্ষার্থীদের সাথে আমাদের যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তা কখনো বিচ্ছিন্ন হোক—এটা আমরা চাই না। এজন্য আমি কয়েকটি প্রস্তাব রাখতে চাই:
১. নিয়মিত সংলাপ ও সমন্বয় কমিটি গঠন:
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গ্রামবাসী ও ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি স্থায়ী সমন্বয় কমিটি করা যেতে পারে। ছোটখাটো সমস্যা বা ভুল বোঝাবুঝি হলে আগে কমিটি বসে সমাধান করবে, যাতে তা বড় আকার ধারণ না করে।
২. সচেতনতা ও আস্থা বৃদ্ধির উদ্যোগ:
শিক্ষার্থীরা যেন গ্রামবাসীর সংস্কৃতি, পরিবেশ ও সমস্যাকে সম্মান করে এবং গ্রামবাসী যেন শিক্ষার্থীদের অতিথি হিসেবে দেখে—এমন পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে। যৌথ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা বা সামাজিক কর্মসূচি (যেমন বৃক্ষরোপণ, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ) আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
৩. আইনের শাসন নিশ্চিত করা:
যে কোনো অপরাধ বা উসকানির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। কারো দলীয় পরিচয় বা প্রভাবশালী অবস্থানের কারণে যেন কেউ ছাড় না পায়।
৪. যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন:
রাস্তা, যাতায়াত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করা জরুরি। নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা থাকলে অনেক ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো সম্ভব।
৫. দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা:
হঠাৎ কোনো ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি বৈঠকের ব্যবস্থা থাকতে হবে। পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে।
৬. রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা:
স্থানীয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের দলীয় রাজনীতি যেন সংঘাতকে উসকে না দেয়, সেজন্য প্রশাসনিক কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
৭. বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ পরিহার:
অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। অধিকাংশ সমস্যা হয়েছে ছোটখাটো বিষয়ে—যেমন রিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল ভাড়া কিংবা পাহাড়ি শাকসবজি নিয়ে। এগুলো বড় করে না দেখে সহজেই সমাধান করা উচিত। আমরা যদি দলমত নির্বিশেষে একই পরিবারের সদস্যের মতো থাকতে চাই, তবে কাদা ছোড়াছুড়ি আর বিদ্বেষ ভুলে একে অপরকে শ্রদ্ধা করতে হবে।
পরিশেষে, গ্রামবাসী ও শিক্ষার্থীদের কাছে আমার আন্তরিক অনুরোধ থাকবে—আমরা একে অপরের পরিপূরক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রামের সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া কোনো সমাধান আসবে না। তাই আসুন, আমরা আলোচনা ও গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে টেকসই সমাধান খুঁজে বের করি।
মো: সোলাইমান সংবাদকর্মী