নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম সাইফুল ওরফে বার্মা সাইফুল। পুলিশের তালিকাভুক্ত এই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে রয়েছে ৩৫টি মামলা। ছাত্রদলের বহিষ্কৃত এই নেতা রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গড়ে তুলেছেন এক ত্রাসের রাজত্ব। চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন থেকে শুরু করে জায়গা দখল—তার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ চট্টগ্রাম মহানগরের বায়েজিদ, পাঁচলাইশ ও খুলশী এলাকার সাধারণ মানুষ।
অপরাধের কেন্দ্র ও সহযোগীরা
বায়েজিদ বোস্তামি থানার বার্মা কলোনির নূর আলম কসাইয়ের ছেলে সাইফুল ইসলাম ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনীতির এই পরিচয়কে ব্যবহার করেই অপরাধ জগতে তার উত্থান। তার অপরাধ জগতের অন্যতম সহযোগী আপন দুই ভাই ফাহিম ও শামসু, যাদের নামেও রয়েছে একাধিক মামলা।
বায়েজিদ বোস্তামি এলাকাকে কেন্দ্র করে হামজারবাগ, হিলভিউ, মোহাম্মদনগর, আমিন জুট মিলস, আলীনগর, ফরেস্ট কলোনি ও রংপুর কলোনির মতো এলাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন একচ্ছত্র আধিপত্য। এসব এলাকায় কেউ নতুন ভবন নির্মাণ করতে গেলেই দিতে হয় মোটা অঙ্কের চাঁদা, নয়তো চড়া দামে তার কাছ থেকেই কিনতে হয় ইট-বালুর মতো নির্মাণসামগ্রী।
বেপরোয়া সাইফুল বাহিনী: সাম্প্রতিক অপরাধচিত্র
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে ‘সাইফুল বাহিনী’ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। চাপাতি, কিরিচ ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাদের দিনদুপুরে মহড়া এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
খুন ও সংঘর্ষ: গত বছরের ১১ অক্টোবর বায়েজিদের শান্তিনগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সবুজ গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষে মো. ইমন নামে এক যুবক নিহত হন। এই ঘটনার মূল হোতা হিসেবে সাইফুলের নাম উঠে আসে।
চাঁদাবাজি ও হামলা: চাঁদা না পেয়ে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর খুলশীতে দুই দোকানিকে কুপিয়ে জখম করে তার লোকজন। এ বছরের জানুয়ারিতে হিলভিউ এলাকায় ইয়াবার টাকার জন্য পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয় এবং বাধা দেওয়ায় এক যুবককে গুরুতর জখম করা হয়।
অপহরণ ও মুক্তিপণ: চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের পুরোহিতসহ তিনজনকে অপহরণ করে ৯ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সাইফুল বাহিনী। যদিও পুলিশ তাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয় এবং সাইফুলের চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।
সর্বশেষ ঘটনা: মাসখানেক আগে বায়েজিদের কুঞ্জছায়া এলাকা থেকে মঈন নামে এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে তার সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় এই বাহিনী। এ ঘটনায় তার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও সাইফুল এখনো অধরা।
নাগরিকদের শঙ্কা
একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলেও মূল হোতা বার্মা সাইফুল প্রায়ই থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। যদিও তার বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে আটক করা হয়েছে, কিন্তু তাতে তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কোনো ভাটা পড়েনি। ফলে, এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক কাটছে না। প্রশ্ন উঠছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাকের ডগায় কীভাবে এই সন্ত্রাসী তার ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে