মোহাম্মদ মাসুদ
মৃত্যু অনিশ্চিত,চীরন্তন সত্য।স্রষ্টা কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত। যেকোনো সময় যেকোনোভাবে যেকোনো কারো মৃত্যু হতে পারে এটাই স্বাভাবিক এটাই সত্য। মানুষ মৃত্যু থেকে কিছু সময়ের জন্য জীবনকে উপভোগ করার বেঁচে থাকার সময় চেয়ে নিয়েছে। কার কখন শেষ ডাক আসে তা কেউ-ই জানে না। এটাই বাস্তব। এটাই নিয়ম। একের পর এক অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন চার দেওয়ালের বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেতে। অবশেষে নানা কারণে সেই বাসনা সত্যি হয়। মুক্তির এক বছরেই চলে গেলেন পরপারে পরকালে।
জল্লাদ শাজাহান প্রধান জল্লাদ হিসেবে দীর্ঘদিন অন্যের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। এখন তার মৃত্যুই সৃষ্টি জগতের স্রষ্টার ইচ্ছায় নিশ্চিত হল। নিউজ শিরোনাম আলোচিত হয়েছে সকল গণমাধ্যমে। তার মৃত্যুর খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়া অনলাইন সারা দেশ জুড়ে। সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। দীর্ঘদিন ৩২ বছর কারাভোগ শেষে কারাগারে বন্দি থাকা জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া (৭৪) অবশেষে মুক্তির এক বছরেরই মারা গেলেন।
১৯৭৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর ৩৬টি মামলায় শাহজাহানের ১৪৩ বছরের সাজা হয়। পরে ৮৭ বছরের সাজা মাফ করে তাকে ৫৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাগার ছেড়ে দুনিয়ার বুকে মুক্তশ্বাস নিলেও চিরতরে দুনিয়া থেকে মুক্তি নিলেন চীরবিদায় নিয়ে চলে গেলেন পরপারে।
জল্লাদ শাজাহান মারা গিয়েও হলেন আলোচিত। মৃত্যুর আগে নানা অঘটনকান্ডে ও ঘটনায় হয়েছেন নানাভাবে সলালোচিত।কারা মুক্তির পর হয়েছেন নানা প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানে আলোচিত। টানা জল্লাদ হিসেবে আট বছর কাজের পর ১৯৯৭ সালে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান জল্লাদের স্বীকৃতি দেন। জল্লাদ দায়িত্বকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামিসহ ৬০ জনের ফাঁসির দড়ি টানা আলোচিত ‘জল্লাদ’ শাহজাহান ভূঁইয়া মারা গেছেন।
২০২৩ গত বছরের রোববার (১৮ জুন) মুক্তি পান। শাহজাহান ভূঁইয়ার বাড়ি নরসিংদীর পলাশ থাবার ইছামতী গ্রামে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত। কারা সূত্রে জানা গেছে, সাজার মেয়াদ কমানোর বাসনায় কয়েদি থেকে জল্লাদ বনেছিলেন শাহজাহান।
জানা যায়,১৯৭৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর ৩৬টি মামলায় শাহজাহানের ১৪৩ বছরের সাজা হয়। পরে ৮৭ বছরের সাজা মাফ করে তাকে ৫৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর ও সশ্রম কারাদণ্ডের সুবিধার কারণে সেই সাজা ৪৩ বছরে এসে নামে। দুটি মামলায় পাঁচ হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাস করে অতিরিক্ত এক বছর জেল খেটে ৩২ বছর পর ১৮ জুন মুক্ত আকাশে শ্বাস ফেলার সুযোগ পান জল্লাদ শাহজাহান।
১৯৮৯ সালে সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে শাহজাহান তার জল্লাদ জীবনের সূচনা করেন। এরপর কারাগারে কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় আসলেই ডাক পড়তো তার। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকার কারণে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে জরিমানার ১০ হাজার টাকা কারা কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করেছে।
সোমবার (২৪ জুন) রাজধানীর একটি হাসপাতাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ‘জল্লাদ’ শাহজাহানের বোন ফিরোজা বেগম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তার ভাই বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকার অদূরে হেমায়েতপুরে থাকতেন। রোববার রাতে তার বুকে ব্যাথা শুরু হলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।
পরিবারের সূত্র জানায়, সোমবার ভোর ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়। তার বোন ফিরোজা হাসপাতালে মরদেহ গ্রহণ করেন। আইনগত কার্যক্রম শেষে শাহজাহানের মরদেহ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে দাফন করা হবে।
সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ ঘাতক, ৬ জন যুদ্ধাপরাধী, কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি খুকু মনির, ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ আলোচিত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন শাহজাহান। ২০০১ সাল থেকে তিনি ফাঁসি কার্যকর শুরু করেন।
শাহজাহান ভূঁইয়া নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম হাছেন আলী ভূঁইয়া। নানান অপরাধে গ্রেপ্তারের পর শাহজাহান ১৯৯১ সালের ১৭ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে যান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শেরে বাংলা নগর থানার ওসি মোহাম্মদ আহাদ আলী গণমাধ্যমকে জানান, জল্লাদ শাহজাহানকে অসুস্থ অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
কারা সূত্রে জানা যায়, জল্লাদ শাহজাহান ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৬ জনের ফাঁসি দিয়েছেন। এর মধ্যে ছয়জন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, চারজন যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি নেতা বাংলাভাইসহ দুজন জেএমবি সদস্য এবং আরও ১৪ জন অন্যান্য আলোচিত মামলার আসামির ফাঁসি কার্যকর করে।