নিজস্ব প্রতিবেদক
শরীয়তপুর থেকে সাবেক স্ত্রীকে নিয়ে এসে স্বামী নিজেই তার পরিচিত কাজী দিয়ে কাবিন ও হলফনামা সৃজন করে বাকলিয়ায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে পুনরায় সংসার শুরু করেন ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা মোঃ রাশেদ। কিছুদিন ভাড়া বাসায় থাকার পর যৌতুক দাবি করে না পেয়ে স্ত্রীকে মারধর করে ঘুমন্ত স্ত্রীর স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যান রাশেদ। নিজেই তার লোকজন দ্বারা কাবিন ও হলফনামা সৃজন করে ওই নারীকে স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করার প্রতিবাদ ও ন্যায় বিচারের দাবিতে চট্টগ্রামের চাক্তাইয়ে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড আসাদগঞ্জ উপশাখার সামনে অনশনে বসেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী। সরেজমিনে, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ব্যাংকের সামনে ওই নারীকে বসে থাকতে দেখা যায়। রাশেদ চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার ভাটিখাইন গ্রামের মৃত হাফেজ আহম্মদের ছেলে। এই ঘটনার খবর পেয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে বুঝিয়ে তার বাবার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়।একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, এ সময় ওই নারী উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের সামনে বিষপানের চেষ্টা করলেও পুলিশ তার হাতে থাকা বিষের বোতলটি উদ্ধারে কোন চেষ্টাই করেনি। একপর্যায়ে ওই নারী বিষপান করলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের একজন এসআই রেজাউলকে বিষয়টি অবগত করে এম্বুলেন্স পাঠানোর অনুরোধ করলে তিনি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাবলুর সাথে যোগাযোগ করতে বলে লাইনটি কেটে দেন। একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের অন্যতম এসআই বাবলুকে। এদিকে বিষপানের ঘটনাটি নিশ্চিত করে এম্বুলেন্সের সহযোগিতা চেয়ে জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার সাংবাদিক সাইদুল ফোন করেন কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জকে। তখন ওসি এম্বুলেন্স পাঠিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও পরের দিন অন্য সাংবাদিকদের জানান, বিষপানের ঘটনা তার জানা নেই। পরে পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ওই নারীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, ওই নারীকে সহযোগিতা করেছেন এমন এক নারী বলেন, পুলিশ সদস্যরা এখানে এসে খারাপ আচরণ করেছেন। রাশেদ পুলিশ সদস্যদের টাকা দিয়েছেন। টাকা পাওয়ার পরই আচরণ বদলে যায় তাদের।
ভুক্তভোগী তরুণী নিপা আক্তার বলেন, প্রথম কাবিনের দেনমোহরের টাকা জালিয়াতির পর কয়েক দফায় রাশেদ কাবিন জালিয়াতি করেছে। প্রথম বিয়ের দেনমোহর না পেয়েও পেয়েছি- এমন প্রতারণার পর দ্বিতীয় বিয়ের সময়ও রাশেদ-মনির আমার সাথে কাবিল নিয়ে প্রতারণা করেছে। ২য় বিয়ের কাবিন এখনো আমি পাইনি। এমনকি তার বন্ধু মনিরের পরামর্শে আমার দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিয়ের সময় আমার পক্ষের কোন শিক্ষিত লোক থাকতে দেয়নি তারা। দেনমোহর জালিয়াতির প্রথম পর্যায়ে যেসকল সাংবাদিক আমাকে সহযোগিতা করতে চেয়েছিল ভবিষ্যতে যেকোন কাজে তাদের সহযোগিতা না নিতেও বাধ্য করেন আমাকে। ফলে, সকল মামলা প্রত্যাহার করে আপোষ মীমাংসায় তাদের পাওয়া যায়নি। এ সুযোগে জাল জালিয়াতি করেছে রাশেদ ও তার বন্ধু রাশেদ।
তিনি আরও বলেন, আমি তার বিরুদ্ধে একটি ন্যায্য মামলা দিলে, সে আমার বিরুদ্ধে এক হালি মিথ্যা মামলা দেয়-যেন আমি মামলা তুলে নেই। এদিকে মিথ্যা মামলাগুলো পরিচালনা করতে তার ব্যাংকের টাকা আছে, বেকার এক গৃহিণী। একটি ন্যায্য মামলা পরিচালনা করতেই যেখানে টাকা নেই, সেখানে এতগুলো মিথ্যা মামলা পরিচালনা করতে টাকা পাবো কোথায়? তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছি। আমি চাই রাষ্ট্র আমাকে মেরে ফেলুক।
তবে অনুসন্ধান করে নিপা আক্তারের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। নিপা আক্তার রাশেদের স্বাক্ষর জালিয়াতির যে অভিযোগ এনেছেন, বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করে এক এক নথিতে একেক রকম স্বাক্ষর পাওয়া গিয়েছে। রাশেদের কাবিননামা ও তালাক নোটিশের স্বাক্ষরে রয়েছে যথেষ্ট ভিন্নতা।
জানা যায়, রাশেদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন ভুক্তভোগী নিপা।
উল্লেখ্য, মোঃ রাশেদ ২০২১ সালে নিপা আক্তারকে বিয়ে করেন এবং এ পরিবারে তাদের একটি পূত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর সাময়িক সুখে থাকলেও কিছুদিন পরই যৌতুকের দাবিতে শুরু হয় স্ত্রীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল অভিযুক্ত রাশেদ তার স্ত্রী নিপার আক্তারের নিকট ৫০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন দাবি করে। মোবাইল ফোন কিনে দিলেও টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কাউকে না জানিয়ে শরীয়তপুর থেকে চট্টগ্রাম চলে আসে রাশেদ। এর পর থেকে তালাক নোটিশ পাঠায়, যৌতুক নিয়ে নোটিশ প্রত্যাহার করে। আবার নোটিশ পাঠায়, আবার প্রত্যাহার করে। নোটিশ—প্রত্যাহার, নোটিশ—প্রত্যাহারের ট্রেন চলতে থাকলে হয়রানির চির মুক্তির জন্য ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করতে বাধ্য হন স্ত্রী নিপা আক্তার। তার স্ত্রী যেকোন শর্তে সংসার করতে আগ্রহী হওয়ায় পাঁচ লাখ টাকার দেনমোহর না পেয়েও পেয়েছে ও মামলা তোলার শর্তে বাধ্য করেন স্বামীর বন্ধু মনির নামের এক ব্যাক্তি (ভিডিও/অডিও ক্লিপ রয়েছে)। পরে তিনিই আবার এক লক্ষ টাকা দেনমোহরে জাল কাবিননামা তৈরি করে বিয়ে করান। কয়েক মাস পর দেওয়া হয় পুনরায় তালাক। জানা যায়, দেনমোহর থেকে বারবার প্রতারিত হওয়া নিপা শরীয়তপুর জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে শিশুর ভরণপোষণের জন্য আবেদন করলে লিগ্যাল এইড অফিসার প্রতিমাসের জন্য ৫০০০ টাকা ধার্য করে দেন। যা প্রতিবছর ১০% হারে বৃদ্ধি পাবে। এক শিশুর ভরণপোষণের জন্য প্রতি মাসে এ টাকা দিতে পারলে সংসারই করা যায় উল্লেখ করে রাশেদ পুনরায় ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ ১২ লক্ষ টাকা মোহরানা ধার্য্যে আরেকটি কাবিননামা সম্পাদনা করেন তার বন্ধু মনিরকে দিয়ে এবং বাসা ভাড়া নিয়ে নগরীর কালামিয়া বাজার দু’তলা মসজিদের পাশে আব্দুল খালেকের বাড়িতে একসাথে থাকতে শুরু করে। ৭ মে আবারো ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন রাশেদ। যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে মারধর করে ঘুমন্ত স্ত্রীর স্বর্ণালংকার নিয়ে বের হয়ে যান তিনি। এ বিষয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করতে গেলে থানা আদালতে মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেন। পরে এই নারী বাধ্য হয়ে আদালতে যান। জানা যায়, রাশেদ তার বন্ধু মনিরের সহযোগিতায় কাবিন সম্পাদনা করে উল্টো তিনি নিজেই কাবিন জালিয়াতির মামলা করেন।
তরণীর বিষ পানের ঘটনায় কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসির) মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, শুনেছি এক তরুণী অনশনে বসেছিল কিন্তু বিষ পানের তথ্য জানা নেই।
ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক ও এলাকাবাসী পথচারী
ঘটনাস্থলে উপস্থিত চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানার এসআই বাবলু
এসআই বাবলু ওই সময় সিভিল পোশাক এসে বলেন আমি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাংবাদিকের সাথে হুমকি ধুমকির উপর কথা বলেন এক পর্যায়ে জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকা ক্রাইম রিপোর্টার ছৈয়দুল করিমের আইডি দেখতেচান সিভিল পোশাক এসআই বাবলু আইডি কার্ড টি দেখার পর তার মোবাইলে একটি ছবি নেন এক পর্যায়ে সবাইকে ঐখান থেকে নামতে বলেন ব্যাংকে কোন ঝামেলা করবেন না সাংবাদিকরা তখন বলেন আমরা ঝামেলা করতে আসি নাই তথ্য সংগ্রহ করতে আসলাম
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এএসআই রেজাউল
এএসআই বুলবুল
অজ্ঞতা নামা আরও একজন এসআই দুই থেকে তিনজন কনস্টেবলসহ
প্রত্যক্ষদর্শী তানিয়া আক্তার
(যার দাবি পুলিশ টাকা নিয়েছে মোটা অংকের )
ভুক্তভোগী নিপা আক্তার