1. live@www.dainikonlinetalaashporbo21.com : news online : news online
  2. info@www.dainikonlinetalaashporbo21.com : দৈনিক অনলাইন তালাশ পর্ব ২১ :
সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
কালীগঞ্জে জনতার দলের বৃক্ষ রোপণ  ভালুকায় তালাবদ্ধ ঘর থেকে স্ত্রী’র লাশ উদ্ধার স্বামী পলাতক। সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করতে পুলিশের বাধা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, কালীগঞ্জ উপজেলা শাখা ও সকল সহযোগী সংগঠনের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান।  প্রবাসী ও দেশবাসীকে ঈদ উল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এনাম উল্লাহ এনাম পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন বাসিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চেয়ারম্যান প্রিন্স।  পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি’র সভাপতি গোলাম কবির সওদাগর বান্দরবানে ইয়াবা সেবনের অভিযোগে ৩ জনকে কারাদণ্ড. রাজশাহীর দুর্গাপুরে নিখোঁজ আয়েশা সিদ্দিকার লা*শ উদ্ধার হয়েছে পবিত্র ঈদ উল আজহা উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো: মুক্তাদির হোসেন

আলেমদের উপর নিপিড়ন চালাতো আওয়ামীলীগ

রিপোর্ট-তাহমিদ খান
  • প্রকাশিত: বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৭৬ বার পড়া হয়েছে

রিপোর্ট-তাহমিদ খান

আমাদের সমাজে আলেমের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা থাকে,কিন্তু আওয়ামীলীগের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হ্মমতা।

পবিত্র রমজানে দিনভর রোজা শেষে স্বাভাবিকভাবেই ইফতারের জন্য প্রস্তুত হন রোজাদাররা। তবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলে স্বাভাবিক পরিবেশে ইফতার করারও নিশ্চয়তা পাননি অনেকে। বিশেষ করে আলেম-ওলামাদের গ্রেপ্তার করতে ইফতারের আগ মুহূর্তেও বিভিন্ন স্থানে হানা দিতো পুলিশ। বিনা অপরাধে ধরে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের নামে চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। এমনই নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব। রোজার মাসেও রিমান্ডে নেওয়া হয় তাকে। দীর্ঘ দেড় মাস রিমান্ড শেষে কারাজীবন ছিল আরও বিভীষিকাময়। ফাঁসির আসামিদের মতো আবদ্ধ সেলে বন্দি করে রাখা হয় ‘খতিবে বাঙ্গালখ্যাত’ এই আলেমকে।

মূলত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ব্যানারে ইসলামি ইস্যুতে রাজপথে সোচ্চার থাকার কারণেই আওয়ামী সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় এই যুগ্ম মহাসচিব। চলাফেরা, ওয়াজ মাহফিল বা সাংগঠনিক কাজকর্মে সব সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে পড়তেন তিনি। সার্বক্ষণিক নজরদারির কারণে ছিল গ্রেপ্তার আতঙ্কও। তার পরিবারের সদস্যদের ওপরও নেমে আসে নানা নির্যাতন। বন্ধ করে দেওয়া হয় তার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলো। আওয়ামী সরকারের এসব জুলুম-নির্যাতনের তথ্য আমার দেশকে জানিয়েছেন তিনি।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘আওয়ামী দুঃশাসন এবং ফ্যাসিবাদের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আলেম-ওলামারা। রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অনেকেই নির্যাতিত হয়েছেন, তা আমরা অস্বীকার করি না। হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম ও শহীদ হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছেন। লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে তা সব মেলালেও ওলামায়ে কেরামের ওপর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে এক রাতের বর্বরতার সমান হবে না

 

তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছর কোনো মসজিদের মেহরাব নিরাপদ ছিল না। কোনো খতিবের মিম্বার বিপদমুক্ত ছিল না। কোনো ওয়াজ মাহফিল, ইসলামি সম্মেলন, ইসলাহী মজলিস, খানকা-কোনো তালিমি মজলিসের অনুমতি মিলত না। কোথাও ওয়াজ মাহফিল, ইসলামি সম্মেলন করলেই বাধার সৃষ্টি করা হতো।’

এর একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি বলেন, ‘মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তির পর আমার মাদ্রাসায় আসার কথা ছিল। কিন্তু সকাল থেকেই মাদ্রাসার চতুর্দিকের রাস্তা ব্লক করে রাখা হয়। সেখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এভাবে ইসলামি আন্দোলনে জুলুম-নির্যাতন করেছে সরকার। এক কথায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার ছিল ইসলামবিদ্বেষী। ইসলামকে দেশ থেকে উৎখাত করাই ছিল তাদের মূল টার্গেট।’

নিজের গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট ও নির্যাতন প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের এই নেতা বলেন, ‘২০১৩ সালে আমাদের বিরুদ্ধে কয়েকশ মামলা দেওয়া হয়। জুনায়েদ বাবুনগরীসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার পরদিন আমার মাদ্রাসা ঘেরাও করে পুলিশ। আমার জামাই মুফতি আব্দুল মালেকসহ চার শিক্ষক ও পাঁচজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মাদ্রাসার কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মূল্যবান কাগজপত্র-সবকিছু নিয়ে যায় তারা। ছাত্র-শিক্ষকদের পিটিয়ে বের করে দিয়ে সেখানে তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর থেকে আমি খুব আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটিয়েছি। আমি যেখানে যেতাম সেখানেই পুলিশ হানা দিত,আমি বেঁচে আছি আল্লাহর রহমতে

জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘আমি কখনো কোথাও আত্মগোপন করিনি। ওই বছরের ৪ রমজান আমি বারিধারা মাদ্রাসায় ছিলাম। আসরের পর গোটা মাদ্রাসায় ডিবি এবং সিভিল ড্রেসে পুলিশ ঘেরাও করে। আমাকে সেখান থেকে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে একজন অফিসারের সামনে বসিয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। পরে আমাকে পাশের একটি রুমে নিয়ে যায়। সেখানে দেখলাম, আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ অনেক ওলামায়ে কেরাম আছেন। সেখানে তাদের সঙ্গে বুট-মুড়ি দিয়ে ইফতার করলাম।’

তিনি বলেন, ‘আমি দেড় মাস রিমান্ডে ছিলাম। একমাস ছিলাম ডিবিতে। ১৫ দিন ছিলাম রমনা, তেজগাঁও ও পল্টন থানায়। রিমান্ডে আমাকে অনেক অত্যাচার করা হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হতো। রাতদিন ২৪ ঘণ্টা আমাকে ঘুমাতে দেয়নি। সাতটা টিম আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এমন কোনো মানসিক নির্যাতন নেই, যা করেনি। দেড় মাস বারবার বিএনপি-জামায়াত ও অন্যান্য দলের সঙ্গে আমার যোগাযোগের কথা জানতে চেয়েছে। তাদের কাছে নাকি রিপোর্ট আছে-আমার সঙ্গে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এক কথা ১০-২০ বার জিজ্ঞাসা করত। সেখানে বারবার আমাকে পাকিস্তানি রাজাকার বলে গালি দেওয়া হয়েছে। এমনকি হাফেজ্জি হুজুর থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষ আলেদের রাজাকারের কমান্ডার বলাসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে

রিমান্ডকালের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘কেরানীগঞ্জ কারাগারে ফাঁসির সেলে দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখা হতো আমাদের। আমাদের যে ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল, সেখানে লাল ফিতায় ‘হেফাজত ওয়ার্ড’ লেখা ছিল। সেখানে অন্য কোনো লোকজনকে আসতে দিত না। পুলিশ বাইরে ডিউটি করত, আমাদের খাবার দিয়ে যেত, কিন্তু কোনো কথা বলত না। ৪৫-৫০ ফুট লম্বা একটি বারান্দায় আমরা ছিলাম ৬৫ জন। বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। এই অবস্থায় কেটেছে কেরানীগঞ্জের কারাজীবন।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় ছয় মাস পর আমাদের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে প্রায় দেড় বছর ছিলাম। তিনটি ঈদ গেছে কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কারাগারে। এক বছর পর্যন্ত আমাদের পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। আমার পরিবার যে কুরবানি দিতে পেরেছে তা জেনেছি ৯ মাস পরে। এভাবে দুই বছর কারাবন্দি জীবন কেটেছে।’

মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, ‘আমাকে ২০টি মামলায় অ্যারেস্ট দেখানো হয়। এর মধ্যে ১২টি ঢাকায় এবং ৮টি চট্টগ্রামের মামলা। এ মামলাগুলো ছিল মিথ্যা। দীর্ঘ ৯ মাসে এক এক করে ২০টি মামলায় আমার জামিন হয়। মুক্তির পরও আমি চট্টগ্রামের মামলায় মাসে আট দিন হাজিরা দিয়েছি। ১২ দিন হাজিরা দিতাম ঢাকায়। এভাবে মাসে ২০ দিন আমার কোর্টের ভেতরে কাটত।’

গ্রেপ্তার ও দুই বছর কারাজীবনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে তার পরিবারের ওপর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার গ্রেপ্তারের পর পল্লবী ও বিরুলিয়ায় অবস্থিত আমার দুইটা মাদ্রাসা প্রায় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয় সরকার। আমার পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছে। আমার ছেলেদের ধরার জন্য বাসা ঘেরাও করত, পুলিশ সব সময় হানা দিত। আমার জামাইদের ধরার চেষ্টা করত। শেষ পর্যন্ত আমার পরিবার ঢাকায় থাকতেই পারেনি। পীরেরবাগের বাসা ছেড়ে সাভারে গিয়ে গ্রামগঞ্জে মানবেতর জীবনযাপন করেছে তারা। আমার ছেলে ও জামাইরা ছয় মাস পর্যন্ত আত্মগোপনে ছিল,

১৯৬৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণকারী মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব মিরপুর মুসলিম বাজার দারুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ২০০০ সালে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন জামিয়া কাসিমিয়া আশরাফুল উলূম মাদ্রাসা। বর্তমানে নিজের প্রতিষ্ঠিত দুই-তিনটি মাদ্রাসা পরিচালনায় নিয়োজিত আছেন মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব সাহেব

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© www.dainikonlinetalaashporbo21.com