1. live@www.dainikonlinetalaashporbo21.com : news online : news online
  2. info@www.dainikonlinetalaashporbo21.com : দৈনিক অনলাইন তালাশ পর্ব ২১ :
মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১২:২৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
রাজশাহী মোহনপুর উপজেলায় পুকুর খনন নামেম মহাউৎসব এর ফলে কৃষকদের ভুগান্তিতে পড়েছে রাজশাহী মোহনপুর উপজেলায় পুকুর খনন নামেম নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবির অভিযানে মাদক সহ রোহিঙ্গা যুবক আটক বান্দরবানে ঝরনায় নিখোঁজ মেহরাবের লাশ চার দিন পর উদ্ধার বান্দরবানে সেনাবাহিনীর অভিযানে অস্ত্র সরঞ্জামসহ ৯ জন আটক বান্দরবানে ঝর্ণা দেখতে গিয়ে কিশোর নিখোঁজ এনসিপি সিলেট জেলার যুগ্ম-সমন্বয়কারী মনোনীত হয়েছেন গোয়াইনঘাটের ফয়সল আহমদ  পার্বত্য জনপদে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে, থানচিতে মতবিনিময় সভায় বান্দরবান জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর সেনাবাহিনীর সহায়তায় পালিয়ে যাওয়া বম পরিবার ফিরল নিজ গ্রামে  সিএমপি’র ডিবি’র অভিযানে চোর চক্রের মূল হোতাসহ আটক- ৩ 

চট্টগ্রাম বছরজুড়ে ডেঙ্গুর থাবা

মোহাম্মদ জামশেদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত: রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১০২ বার পড়া হয়েছে

মোহাম্মদ জামশেদুল ইসলাম

সারা দেশে সাধারণত বর্ষা পরবর্তী সময় অর্থাৎ আগস্ট থেকে অক্টোবরকে ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ বলা হয়। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে সারাবছরই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে চট্টগ্রামে। গেল ৫ বছরের মধ্যে ২০২২ ও ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরেও জানুয়ারি-জুলাই পর্যন্ত ৩৯৬ জন আক্রান্ত হয়েছে ডেঙ্গুতে। এরপর থেকেই লাগামহীন ডেঙ্গুর থাবা। এর পেছনে চলমান অপরিকল্পিত নগরায়ন, মশক নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা ও স্বাস্থ্যখাতের দুরবস্থাসহ বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।  একমাসেই সারাবছরের অর্ধেক রোগী! চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত অর্থাৎ ২৬ দিনে মোট ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৭১৭ জন। এ সময়ে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে জানুয়ারি থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩১৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। সে হিসাবে এ বছরে মোট শনাক্ত হওয়া ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই শনাক্ত হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসের ২৬ দিনে। চসিকের যে সব এলাকা ডেঙ্গু ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২০টি এলাকায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩টি এলাকা ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া চলতি মাসের ২৪ দিনে চট্টগ্রামে যে পরিমাণ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে, তা গত আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আবার গেলো নয় মাসে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর অর্ধেকই ছিল চলতি মাসে। যদিও গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কিছুটা কম। তবে সংখ্যার বিচারে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমে এলেও এখনো তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরকে বছর ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ব্যাপারটা অনেকটাই যেন ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথা’র মতো।   চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিন পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে সিটি কর্পোরেশনের যেসব এলাকায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহিত এডিস মশার উপদ্রব বেড়েছে, তার মধ্যে ১০টি এলাকা উল্লেখযোগ্য। সেগুলো হলো— বাকলিয়া, কোতোয়ালী ও বায়েজিদ বোস্তামি, খুলশী, পাহাড়তলী, বন্দর, হালিশহর, পতেঙ্গা, চকবাজার, চান্দগাঁও এলাকা। এরমধ্যে নগরের বাকলিয়া, কোতোয়ালী ও বায়েজিদ এলাকাকে ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন অফিস। পাঁচলাইশ, ডবলমুরিং, লালখানবাজার, আগ্রাবাদ, অক্সিজেন, নাসিরাবাদ, দামপাড়া, কাট্টলি, মুরাদপুর, ও চৌমুহনীসহ বাকি এলাকাগুলোতে এক-দুইজন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় চট্টগ্রামে। তবে গত জুলাই থেকে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় উদ্বেগে রয়েছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।   ডেঙ্গু রোগী বেশি উপজেলার লোহাগাড়া- সাতকানিয়ায় চট্টগ্রামে নগরের পাশাপাশি উপজেলায়ও বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চলতি বছর শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের বাসিন্দা রয়েছে ৭৬৯ জন আর বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা ৫৪৬ জন। ১৫ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে দুই উপজেলায়।সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ায় এবং সবচেয়ে কম সন্দ্বীপে। এরমধ্যে লোহাগাড়ায় ১৫৫ জন এবং সাতকানিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০ জন আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়াও বাঁশখালীতে ৩৬ জন, আনোয়ারায় ২৫ জন, চন্দনাইশে ৩৫ জন, পটিয়ায় ২৬ জন, বোয়ালখালীতে ২৯ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১৮ জন, রাউজানে ২৩ জন, ফটিকছড়িতে ১৭ জন, হাটহাজারীতে ২২ জন, সীতাকুণ্ডে ৪৭ জন, মিরসরাইয়ে ১৭ জন, সন্দ্বীপে ৮ জন ও কর্ণফুলী উপজেলায় ১১ জন রোগী পাওয়া গেছে।  ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বেশি পুরুষের, মৃত্যু বেশি নারীর গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হন শান্তা সূত্রধর। গত ৭ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শান্তাকে। শারীরিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই করা হয় শান্তার ডেলিভারি। ওদিন দুপুরে সন্তান জন্ম দিয়ে রাতেই মারা যান শান্তা। ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় কিডনি ও হার্ট ড্যামেজ হয়ে যায় শান্তার।শুধু শান্তা নয় ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৮ জন নারী মারা গেছেন। আক্রান্তের সংখ্যায় পুরুষরা এগিয়ে থাকলেও ডেঙ্গুতে পুরুষের তুলনায় নারীদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। চলতি বছরও চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নারীরা বেশি মারা যাচ্ছেন। অন্যদিকে, ডেঙ্গুতে নারীদের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হলেও একই সময়ে ৩ জন পুরুষ মারা গেছেন।চিকিৎসকরা বলছেন— জেনেটিক কারণে নারীদের জটিলতা বেশি দেখা দেয়, যে কারণে ডেঙ্গুতে নারীদের মারা যাওয়ার হার বেশি। এছাড়া গর্ভাবস্থায় ও ঋতুস্রাবকালে কোন নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকে। একইসাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার পাশাপাশি উদাসীনতা নারীর মৃত্যু বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে ধারণা চিকিৎসকদের। যদিও ডেঙ্গুতে পুরুষের তুলনায় নারীরা কেন বেশি মারা যাচ্ছেন সেটি নিয়ে এখনো কোন গবেষণা করা হয়নি।সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর আক্রান্ত ১৩১৫ জনের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৭১৯ এবং নারীর সংখ্যা ৩৪৭ ও শিশু ২৪৯ জন। এরমধ্যে মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে নারী ৮ জন, পুরুষ ৩ জন ও শিশু রয়েছে ২ জন। আর মারা যাওয়া নারীদের বেশিরভাগই এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ও নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগেছে।   যা বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে সংক্রমণ কম বলে ‘অবহেলা’ করলে আক্রান্ত ও মৃত্যু হার বাড়ার সম্ভাবনারও রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস বলেন, অনিয়মিত বৃষ্টি ডেঙ্গু বাড়ায়। মানুষ সচেতন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কিন্তু মানুষ মোটেও সচেতন না। যেহেতু স্বচ্ছ পানিতে এডিসের জন্ম তাই এক্ষত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। এর বাইরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা আক্রান্ত ও মৃত্যু হার বাড়তে পারে।তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যেসব এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছে, তার মধ্যে জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকাই বেশি। কারণ ফুলের টব, গাছের টব, টায়ার, বোতলে পানি জমে থাকলেই এইডিস মশা জন্ম নেবে। তবে নিম্নাঞ্চলে যেহেতু পানি বেশি জমে থাকে, সেখানে বেশি হচ্ছে।একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন খান বলেন, ‘এই সিজনে এমনিতেই ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। তার উপর সিটি কর্পোরেশন বা প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গু বাড়বে। তবে আশার কথা হচ্ছে, চট্টগ্রামে এখনো পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ কম আছে। বর্তমানে যারা চিকিৎসাধীন আছে তাদের মধ্যেও তেমন কোনো জটিল রোগী নেই। মানুষ যদি সচেতন থাকে তাহলে সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব। এর বাইরে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে অনেকক্ষেত্রে মৃত্যুহারও কমিয়ে আনা সম্ভব হতো।জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা নগরের বেশ কয়েকটি এলাকাকে চিহ্নিত করেছি। সেখানে এডিস মশার লার্ভার সার্ভে চলছে। বিষয়টি আমরা সিটি কর্পোরেশনকেও জানিয়েছি। এছাড়াও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© www.dainikonlinetalaashporbo21.com