মোহাম্মদ জামশেদুল ইসলাম
( বার্তা সম্পাদক )
কারো পৌষমাস, কারো সর্বনাশ
দুর্যোগ মহামারি ‘কারো জন্য পৌষ মাস, আবার কারো জন্য সর্বনাশ’ বলে মনে করছে ভোক্তাদের জাতীয় সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বানভাসি মানুষকে পুঁজি করে সাহায্যকারী ক্রেতাদের পকেট কাটছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। নৌকা ভাড়া, গণপরিবহন ও ট্রাক ভাড়া, মোমবাতি, শুকনো খাবার, খাবার পানি, সবজিসহ নিত্যপণ্যে জনগণের পকেট কাটার উৎসব বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। প্রয়োজেন সেনাবাহিনী জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি কঠোরভাবে তদারকিরও দাবি জানানো হয়েছে। শনিবার এক বিবৃতিতে ক্যাব সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন এ আহ্বান জানান।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী অস্থিতিশীল পরিবেশ কাটিয়ে উঠতেই নতুন সংকটের মুখে পড়েছে দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই। সড়কপথে ফেনীতে বন্যার কারণে নতুন করে আসতে পারছে না কোনো পণ্য। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লালপুর অংশে আটকা পড়ে আছে হাজার হাজার পণ্যবাহী ট্রাক। নিত্যপণ্য নিয়ে চট্টগ্রামে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে এসব গাড়ি।এদিকে ফেনী, মিরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ বন্যার কারণে বেড়ে গেছে শুকনো খাবারের চাহিদা। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল থেকে বন্যার্তদের সহায়তায় বিভিন্ন সংগঠন, সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ কেনার কার্যক্রম শুরু হয়েছে এ পাইকারি বাজারে। প্রতিমুহূর্তে তা বাড়ছে। হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কেউ ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন, কেউ পণ্য নিয়ে লুকোচুরি খেলছেন।শনিবার (২৫ আগস্ট) ঘুরে দেখা গেছে, বন্যার কারণে ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে চিড়া, মুড়ি ও গুড়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারের সব দোকানেই এসব পণ্য শেষ হয়ে গেছে। বলতে গেলে চিড়া, মুড়ি, গুড় বাজার থেকে একেবারে উধাও। কিছু কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও বেশি দাম রাখার অভিযোগ রয়েছে।এছাড়া চালের বাজারে দুপুর পর্যন্ত বন্যার অজুহাত আঁচ করা যায়নি। তবে পেঁয়াজ, তেল, লবণ, স্যালাইন, মোমবাতি, দিয়াশলাইসহ বিভিন্ন পণ্যের জন্য হন্য হয়ে ছুটতে হয়েছে ক্রেতাদের। সরবরাহ সংকটের কথা বলে ২-৪ টাকা বেশি ধরে বিক্রি করছেন দোকানিরা। পেঁয়াজের দাম একলাফে বেড়েছে ১০-১৫ টাকা।ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যার কারণে সারা দেশের যোগাযোগ বন্ধ থাকায় গত কয়েক দিন ধরে চট্টগ্রামে কোনো পণ্যবাহী গাড়ি আসেনি। পণ্যের সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ায় খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে পাইকারিতে পণ্যের সংকটের পাশাপাশি দাম বেড়েছে। এছাড়া চিড়াসহ অন্য জাতীয় জিনিসের তো এখন মৌসুম না। তাই এগুলো মজুদ কম ছিল।
আলু-পেঁয়াজের বাড়তি দাম
গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) পাইকারি দামে প্রতিকেজি আলুর দাম ছিল সাড়ে ৪৬ টাকা। অথচ সেটি বেড়ে শনিবার বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা ৬৫ টাকা পর্যন্ত। আর দু’দিন আগে ৯৫ টাকায় বিক্রি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজ শনিবার সকালে বিক্রি হয়েছে ১০৭ টাকায়, দুপুর গড়াতেই তা ঠেকে ১০৮-১১০ টাকায়। অন্যদিকে ৮০ টাকার পাকিস্তানি পেঁয়াজ হয়েছে ৯০ টাকা পর্যন্ত।খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস সময়ের কাগজকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। ফেনীসহ বিভিন্ন স্থানে পানি থাকায় পণ্য পরিবহনগুলো আটকা পড়েছে। সেই কারণে চট্টগ্রামে তথা খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে গাড়ি আসতে পারেনি। এতে পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এখন নামলেই গাড়িগুলো মালামাল নিয়ে চট্টগ্রামে আসতে পারবে।’ফেনীতে গাড়ি আটকে থাকায় খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে পণ্যের দাম বেড়েছে বলে স্বীকার করেছেন এ ব্যবসায়ী নেতা। তিনি আরো বলেন, ‘গাড়ি আসতে না পারায় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এখানে অনেক দোকানে পণ্য নেই। আর যাদের কাছে তারা একটু বাড়তি দামে বিক্রি করছে।’
পেঁয়াজের দাম বেড়েছে জানিয়ে ইদ্রিস বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় আজ পেঁয়াজের দাম বাড়তি। তবে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়বে কিনা। যদি গাড়ি স্বাভাবিকভাবে চট্টগ্রামে আসতে পারে তাহলে হয়তো একটু দাম কমতে পারে।’
ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাচ্ছে দাম
বন্যার্তদের সহায়তায় বিভিন্ন সংগঠন, সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফলে শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের ক্রয়-বিক্রি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধিপায়েছে। এ সুযোগে কয়েকটি পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আনাড়ী ক্রেতার ঢলকে পুঁজি করে ক্ষণে ক্ষণে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সংকটের ভয় দেখিয়ে ইচ্ছেমতো দামে বেচাকেনা করছেন তারা।ব্যবসায়ীরাই বলছেন, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ ইচ্ছেমতো ধরে বেচাকেনা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাইকারী ব্যবসায়ী জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি প্রতিকেজি আলু সাড়ে ৪৬ টাকা করে বিক্রি করছেন। তবে (গতকাল সকালে )এসে জানতে পারেন আলুর দাম বেড়ে গেছে। আর সবাই প্রতিকেজি আলু ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা ধরে বিক্রি করছেন। আমিও মাঝামাঝি দামে বিক্রি করছি। এখন যা আছে তা শেষ হলে আর আলু বিক্রি করা হবে না।
কাঁচা মরিচের দাম হাজার টাকা
সোনা চেয়েও দামি কাঁচা মরিচ
বন্যা পরিস্থিতিতে সরবরাহ সংকটে চট্টগ্রামে কাঁচা মরিচের দাম আকাশ ছোঁয়া। কোনও কোনও বাজারে মিলছেই না কাঁচামরিচ।খুচরা বাজারে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে গত বৃহস্পতিবারের আগে ছিল ৩৫০-৪০০টাকা,গত শুক্রবার থেকে বৃদ্ধি পাচ্ছে কাচাঁমরিচ ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায় চলছে বাজারে।,চাক্তাই সানজিদা মার্কেট,রাজাখালী বউবাজার গতকাল রোববার (২৫ আগস্ট) সকালে এবং নগরের চকবাজার, কাজীর দেউড়ি ও বহদ্দারহাট বাজারে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।এসব বাজারে কাঁচামরিচের দেখা মিললেও অন্যদিনের তুলনায় নগন্য। সরবরাহ কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।তারা বলছেন, বন্যার কারণে বাজারে কাচাঁমরিচ আসতে পারছে না। চট্টগ্রামের বাজারে অধিকাংশ সবজি আসে বগুড়া, ফরিদপুর, জামালপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে।গত তিনদিন কাঁচামরিচসহ সবজি আসছে না। ফলে বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে কয়েক গুণ দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন অসাধু বিক্রেতারা।এদিকে দেশের ১১টি জেলা বর্তমানে বন্যাকবলিত। এতে সবজির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অনেক ভোক্তা। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, বন্যার কারণে সবজির মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা নেই। কারণ যেসব এলাকায় বন্যা হয়েছে, সেখান থেকে খুবই কম পরিমাণে সবজি আসে।নগরের বহদ্দারহাট, কাজীর দেউড়ি ও কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারে দোকানিরা ১০০ গ্রাম মরিচ বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।কাঁচা মরিচের পাশাপাশি বাজারে বেগুনের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে বেড়েছে। শুক্রবার প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ১১০-১৩০ টাকা দরে। বাজারে ব্রয়লার মুরগি, মুরগির ডিম, মাছ ও অন্যান্য সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা, আলু ৬০ টাকা, রসুন ২০০-২২০ টাকা ও আদা ২৬০-২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরায় এক সপ্তাহ আগের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা ও আলুর দাম ৫ টাকা কমেছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৫০–২৬০ টাকা এবং প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৫০-১৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।নগরের চকবাজারের দোকানি মফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে গত দু-তিন দিন কাঁচামরিচ না আসায় সংকট দেখা দিয়েছে। মহাসড়কে পানির কারণে দূরের জেলা থেকে সবজি ও মরিচ আসছে না। দুদিন আগেও কাঁচা মরিচ প্রতি কেজির দাম ১৭০-২৮০ টাকার মধ্যে ছিল। এখান বাজারে কাঁচা মরিচ তেমন একটা নেই, তাই দাম বেড়েছে।