আরাফাত হোসেন কাউসার:
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনসমূহের সমন্বয়ে গঠিত এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করেন। আজ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। সারাদেশ থেকে আসা প্রায় দুই হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এই অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এই অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে সমন্বয়ে গঠিত এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। জোটের আহবায়ক বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম এর সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মাঈন উদ্দিন গণমাধ্যামকে জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষায় শিক্ষক-কর্মচারিগণের দীর্ঘদিন ধরে ২৫% উৎসবভাতা , ১০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া , ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা , কমিটি দ্বারা নির্যাতন, বদলী ব্যবস্থা না থাকা , শিক্ষক স্বল্পতাসহ বিভিন্ন বৈষম্য বিরাজমান। তাছাড়া সরকারের বিভিন্ন বৈষম্যমূলক নীতিমালার বেড়াজালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা দিন দিন দুসাধ্য হয়ে পড়ছে । তরুণ মেধাবীরা স্বল্প বেতনে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান অর্থায়ানের অভাবে খন্ডকালীন শিক্ষক দ্বারাও পাঠদান করাতে পারছে না। এতে করে শিক্ষার্থীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা উচ্চ বেতনে পড়ালেখা করলেও শহরে সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে পড়ালেখা করানো হয়। এটা গ্রামের প্রান্তিক মানুষের প্রতি বৈষম্যই নয় বরং অবিচার। ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকার গত ৫ আগস্ট পতন হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এতে ছাত্র-ছাত্রীরা কেন বৈষম্য থাকবে। মাঈন উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পাঠ্যক্রম, আইন এবং একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হলেও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় পার্থক্য রয়েছে। অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে বেতনের ১০% হারে কেটে রাখলেও বৃদ্ধা বয়সে যথাসময়ে এ টাকা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নেই। অনেক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যান। শিক্ষক-কর্মচারী নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগ এনটিআরসিএ সুপারিশ করলেও নিয়োগ দিতে ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগও রয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহ-প্রধান কর্মচারী নিয়োগ কমিটির হাতে থাকায় নিয়োগ বাণিজ্যের কথা হরহামেশাই শোনা যায়। এই বৈষম্য ও দুর্নীতি দূরীকরণে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ জরুরি। জোটের সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন জানান, গতমাসে এমপিওভুক্ত শিক্ষায় বৈষম্য নিরসনসহ জাতীয়করণের দাবিতে জোট নেতৃবৃন্দ মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টার সাথে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন ও সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। তিনি আরোও বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করলে সরকারের অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয় না বরং অর্থের অপচয় ও দুর্নীতি রোধ করতে পারলে অতিরিক্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা সম্ভব। ছয়টি সংস্কার কমিটির সাথে শিক্ষা সংস্কার কমিটি না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীগণ হতাশ। অবিলম্বে শিক্ষা সংস্কার কমিটি গঠন সহ জাতীয়করণের দাবিতে নিম্নোক্ত কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়। আজ মঙ্গলবার ১৫ই থেকে ৩০শে অক্টোবর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, সুধীজনদের নিয়ে মত বিনিময় করবেন। ১ই থেকে ১৫ই নভেম্বর উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, সুধীজনদের নিয়ে মত বিনিময় করবেন। ১৬ই থেকে ৩০শে নভেম্বর জেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, সুধীজনদের নিয়ে মত বিনিময় করবেন। ১ই থেকে ৩০শে ডিসেম্বর বিভাগীয় ও সিটি কর্পোরেশন পর্যায়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, সুধীজনদের নিয়ে মত বিনিময় করবেন। এরপর ২৫শে জানুয়ারী ২০২৫ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচিসহ ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিবে বলে জানান। অন্যদিকে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি জনাব নুরুল হক নুর বক্তৃতা দেন, তিনি বলেন, গত ফ্যাসিবাদ সরকারের আমল থেকে কেন এখনো শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি আহ্বান করেন। ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানে মধ্যে দিয়ে এই ফ্যাসিবাদ সরকারকে পতন করতে পেরেছি। আন্দোলন সংহতি ও গণহত্যা কথা প্রকাশ করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন যদি শিক্ষা জাতীয়করণ দাবি না মানে তাহলে আমি এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সাথে সকল সহযোগিতা এগিয়ে আসবে বলে জানান। এসময় গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয় জনাব জুনাইদ সাকি বক্তৃতা দেন,তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে স্বৈরাচারী সরকার পতন হয়। আমরা গণতন্ত্রের বিশ্বাসী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন বৈষম্য থাকবে। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ দাবি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান করেন অন্তর্বর্তী সরকারকে। এইদিকে কর্মসূচিতে মো. জহিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অধ্যক্ষ মো. দেলাওয়ার হোসেন আজীজী, এনডিএম এর চেয়ারম্যান জনাব ববি হাজ্জাজ, মুজিবুর রহমান বাবুল, মোঃ কেফায়েত উল্লাহ, লুৎফুর রহমান শাহ আলমসহ অন্যান্য জোট নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা দেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম (বাবেশিকফো), বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম, এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক ফোরাম, বাংলাদেশ সহকারী প্রধান শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষক পরিষদ, বাংলাদেশ শিক্ষক সমাজ, ভোকেশনাল শিক্ষক সমিতি, এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ মঞ্চ, মাধ্যমিক সহকারি শিক্ষক সমিতি, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারী পরিষদসহ আরোও অন্যান্য সংগঠন। বিভিন্ন শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনের সমন্বয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট গঠন করা হয়েছে।